অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অগ্রগতির কারণে দারিদ্রতা, অসুস্থতা, অজ্ঞতা সারাবিশ্বে হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১ সালে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার নীতিগুলি যা এই স্মরণীয় অগ্রগতিকে ইন্ধন জুগিয়েছে তা “ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে” পরিমাপ করা হয়েছে, যা ওয়াশিংটনের ১ নম্বর থিঙ্ক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডশন দ্বারা প্রকাশিত বার্ষিক গাইডে উল্লেখ করা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক’ প্রকাশ করে থাকে।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মাত্রা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আইনের শাসন, সরকারি আয়-ব্যয়ের পরিমাণ, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নগত দক্ষতা এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলোকে ভিত্তি করে নম্বর হিসেব করা হয়। ২৭ বছর ধরে সূচকটি একটি স্পষ্ট এবং সহজ ফরমেটে চিন্তাশীল বিশ্লেষণ সরবরাহ করে আসছে। সূচকটি ১৮৪ টি দেশে সম্পত্তির অধিকার হতে শুরু করে আর্থিক স্বাধীনতা পর্যন্ত ১২টি নির্দেশক অন্তর্ভুক্ত করে। ‎অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ভিত্তিগুলি হল ব্যক্তিগত পছন্দ, স্বেচ্ছাসেবক বিনিময়, বাজারে প্রবেশ এবং প্রতিযোগিতা করার স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তির সুরক্ষা। ৪২ টি ডেটা পয়েন্ট একটি সংক্ষিপ্ত সূচক নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়, লিঙ্গ আইনী অধিকার সমন্বয়ের সাথে নারীদের পুরুষদের মতো অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্তর কতটা তাও পরিমাপ করা হয় এই সূচকে।‎

‎বিশেষ করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অর্থ হল যতক্ষণ পর্যন্ত বিনিময়টি স্বেচ্ছামূলক এবং অবহিত থাকে ততক্ষণ যে কেউ বা যেকোনো গোষ্ঠীর সাথে পণ্য, অর্থ বা পরিষেবা বিনিময় করতে পারে। সরকারের ধরনের উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিভিন্ন উপায়ে বিদ্যমান হতে পারে। পুঁজিবাদী শৈলীর তুলনায় সরকারের একটি কমিউনিস্ট বা সমাজতান্ত্রিক আকারে অনেক কম অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে।‎ একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মানে সরকার বা অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সমৃদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা।‎ জনগণের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সম্পদ এবং শ্রম রক্ষা করার ক্ষমতা থাকবে।‎

‎অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মাত্রা পাঁচটি ক্ষেত্রে পরিমাপ করা হয় –

১. সরকারের‎ আকার

সরকারী ব্যয়, কর, এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত উদ্যোগের আকার বৃদ্ধি করতে সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ফলে ব্যক্তিগত পছন্দ এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। ‎এই ক্ষেত্রে উচ্চ রেটিং পেতে, সরকারকে অবশ্যই কর দিতে হবে এবং বিনয়ী ভাবে ব্যয় করতে হবে, এবং ‎‎ ‎‎প্রান্তিক করের হার‎‎ ‎‎ তুলনামূলকভাবে কম হতে হবে। যদিও সরকার সম্পত্তির অধিকার রক্ষা, চুক্তি প্রয়োগ এবং কিছু পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সরকারের আকার অথবা কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে তারা অনিবার্যভাবে বাণিজ্যে জড়িয়ে পরে এবং তাদের শ্রমের ফল উপভোগ করার জন্য জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।‎

ছবি: ইন্টারনেট

২. আইন ব্যবস্থা এবং সম্পত্তি অধিকার‎

ব্যক্তিদের সুরক্ষা এবং তাদের সঠিকভাবে অর্জিত সম্পত্তির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উভয়েই একটি সুশীল সমাজের কেন্দ্রীয় উপাদান। প্রকৃতপক্ষে, এটি সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।‎ সম্পত্তির সুরক্ষা, চুক্তি প্রয়োগ এবং আইনের সমান প্রয়োগের সাথে একটি দেশের আইন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি সম্ভবত অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, কারণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য মানুষকে তাদের ব্যক্তি এবং শারীরিক সম্পত্তিতে সুরক্ষিত থাকতে হবে; এর জন্য একটি বিচার ব্যবস্থাও প্রয়োজন যা চুক্তিচুক্তিগুলি প্রয়োগ করে‎।

৩. মুদ্রা পরিচালনা

মুদ্রাস্ফীতি সঠিকভাবে উপার্জিত মজুরি এবং সঞ্চয়ের মূল্য হ্রাস করে। সম্পত্তির অধিকার রক্ষার জন্য সঠিকভাবে মুদ্রা পরিচালনা করা অপরিহার্য। যখন মুদ্রাস্ফীতি কেবল উচ্চই নয়, অস্থিতিশীলও হয়, তখন জনগণের পক্ষে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা এবং একইসাথে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে।‎ ‎এক নজরে মুদ্রা পরিচালনার বিষয়টি কেনো কেবল ভাল অর্থনৈতিক নীতির একটি পরিমাপের পরিবর্তে স্বাধীনতার একটি পরিমাপক তা পরিষ্কার নাও হতে পারে; কিন্তু অর্থ সরবরাহের‎‎‎ উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাতিত সরকারের আইনগত ‎‎একচেটিয়া হস্তক্ষেপ থাকলে একটি দেশের অর্থ সরবরাহের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নাও হতে পারে। অতএব, সরকার তার একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে কতটা বিরত থাকে তার একটি পরিমাপক হল উপযুক্ত অর্থ। এখানে উচ্চ রেটিং পেতে, একটি দেশের ‎‎ ‎‎মুদ্রাস্ফীতি‎‎ ‎‎ অবশ্যই কম এবং স্থিতিশীল হতে হবে, এবং সরকারকে অবশ্যই জনগণকে অন্যান্য দেশের মুদ্রার মালিক হওয়ার অনুমতি দিতে হবে।‎

‎৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য

বাণিজ্যের স্বাধীনতা, বিনিময় অর্থাৎ বিস্তৃত অর্থে, ক্রয়, বিক্রয়, চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য; যা হ্রাস পায় যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বিনিময়ের স্বাধীনতা, ব্যবসা এবং ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।‎ ‎ ‎যে সব দেশ সংরক্ষণবাদী শুল্ক, কোটা এবং মূলধন নিয়ন্ত্রণ প্রণয়ন করা থেকে বিরত থাকে তারা এই ক্ষেত্রে উচ্চতর রেটিং পায়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অর্থ হল লোকেরা তাদের পছন্দমতো যেকোনো ব্যক্তির সাথে বৈধ বাণিজ্যে জড়িত হতে পারে। যদি সরকারী কর অন্য দেশের মানুষের সাথে ক্রয় বা বিক্রয় থেকে মানুষকে বাধা দেয়, তবে তা জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হ্রাস করে।‎

‎৫. রেগুলেশন

সরকার কেবল আন্তর্জাতিকভাবে বিনিময়ের অধিকার সীমিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করে না, কঠিন বিধিমালা আরোপ করতে পারে যা বিনিময়, ঋণ অর্জন, কাজ করার অধিকার সীমিত করে যার ফলস্বরূপ দেশের জনগণ অবাধে ব্যবসা পরিচালনা করতে বাধার সম্মুখীন হয়। ‎সুদের হার নিয়ন্ত্রণ (সুদ আইন), বিদেশীদের দ্বারা ব্যাংক মালিকানার উপর বিধিনিষেধ, ‎‎ন্যূনতম মজুরি, ‎‎সামরিক ‎‎নিয়োগ, ‎‎ব্যবসায়িক লাইসেন্সিং এবং ‎‎মূল্য নিয়ন্ত্রণের‎‎ মতো ‎নিয়ন্ত্রণ সরকারী নীতিপ্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত ‎‎করা হয়। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ এবং বিধিগুলি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার নীতিগুলি লঙ্ঘন করে। উচ্চ রেটিং পেতে, দেশগুলিকে অবশ্যই এই জাতীয় বিধিগুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। মুক্ত বাজারের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ, ব্যবসায় স্বাধীনতা এবং বাণিজ্য মুক্ত রাখতে হবে।‎
এই পাঁচটি বিস্তৃত ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত ১২টি পরিমাপক হলো : সম্পত্তির স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় কার্যকারিতা, সরকারের অখণ্ডতা, করের বোঝা, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব স্বাস্থ্য, ব্যবসার স্বাধীনতা, শ্রম, মুদ্রানীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক স্বাধীনতা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশসমূহের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি

‎বিশ্বের সবচেয়ে মুক্ত অর্থনীতির দেশ হচ্ছে সিঙ্গাপুর এবং হংকং। তুলনামূলকভাবে এদের কম কর, একটি ভাল আইন ব্যবস্থা, সাউন্ড মানি, ‎‎ ‎‎মুক্ত বাণিজ্য এবং ন্যূনতম নিয়মকানুন আছে। অন্যান্য উচ্চ মূল্যায়িত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য। সবচেয়ে সাম্প্রতিক তথ্য ২০১৯ সাল থেকে পাওয়া যায়, হংকং শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ২০২১ এ সিঙ্গাপুর ঐ স্থান দখল করেছে।

ছবি: ২০০২ সালে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার হার। ছবি: ইকনলিব.অরগ

‎কিছু দেশ যেমন, হংকং, সিঙ্গাপুর, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ধারাবাহিকভাবে ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে উচ্চ রেটিং অর্জন করে আসছে। জার্মানির অর্থনৈতিক স্বাধীনতার রেটিংও বেশ স্থির ছিল। ২০০২ সালে জার্মানির রেটিং ছিল ৭.৩, যা ১৯৮০ সালে ছিল ৭.০। ফ্রান্সের রেঙ্কিং ১৯৮০সালে আটাশ থেকে চুয়াল্লিশতম স্থানে নেমে যায়।

‎‎জনসংখ্যার ‎‎দিক থেকে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতি, ভারত এবং চীন, উভয়েরই রেটিং কম। তবে উভয়ই বিগত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিক থেকে দুর্দান্ত সফলতা অর্জন করেছে। চীনের রেটিং ৩.৮ থেকে বেড়ে ৫.৭ হয়েছে এবং ভারতের রেটিং ৪.৯ থেকে বেড়ে ৬.৩ হয়েছে। যদিও তাদের বর্তমান রেটিং এখনও বিশ্ব মানের তুলনায় কম। তাই ধারণা করা যায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উন্নয়নের ফলে উভয় দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।‎


২০২০ এবং ২০২১ সালে চীনা সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে সম্পত্তির অধিকারের আপাত বর্ধিত নিরাপত্তাহীনতা এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়া সম্ভবত হংকংয়ের স্কোরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে আইন ব্যবস্থা এবং সম্পত্তির অধিকারে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। পরবর্তী সর্বোচ্চ স্কোরিং দেশ নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া , আয়ারল্যান্ড,সুইজারল্যান্ড, জর্জিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লিথুয়ানিয়া এবং ডেনমার্ক।‎ অন্যান্য প্রধান দেশগুলির‎‎ রেঙ্কিং‎ হল কানাডা (১৪তম), জাপান (১৮তম), জার্মানি (২২তম), ইতালি (৪৭তম), ফ্রান্স (৫৩তম), মেক্সিকো (৭৫তম), রাশিয়া (১০০তম), ভারত (১০৮তম), ব্রাজিল (১০৯তম), এবং চীন (১১৬তম)।‎ ‎দশটি সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দেশ‎ হল: মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইরান, জিম্বাবুয়ে, আলজেরিয়া, লিবিয়া, সুদান এবং সর্বশেষে ভেনেজুয়েলা।‎

২০২১ সালের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১৭৮টি অর্থনীতির মধ্যে সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ পাঁচটি অর্থনীতি ‘মুক্ত’ শ্রেণিতে রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৩৩টি অর্থনীতি ‘বহুলাংশে মুক্ত’ তালিকায় স্থান পেয়েছে। স্পেন, ভিয়েতনাম, রাশিয়াসহ ৫৯টি অর্থনীতি ‘মাঝারি মাত্রায় মুক্ত’ তালিকায় আছে। অন্যদিকে ৬০-এর কম স্কোর পাওয়া ৮১টি অর্থনীতি ‘বহুলাংশে অনুদার’ তালিকায় আছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিক দিয়ে এখনো সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া। ভেনিজুয়েলা ও কিউবার পরই দেশটির অবস্থান।


অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় কয়েক বছরের ব্যবধানে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষে রয়েছে ভুটান। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে কেবল ভুটান। দেশটির স্কোর ও অবস্থান হলো যথাক্রমে ৫৮.৩ এবং ১০৯তম। বাংলাদেশের ওপরে অবস্থান হলেও ভুটানের এ বছর অগ্রগতি কমেছে (-৩.৮) এবং বাংলাদশের বেড়েছে (+.১)।

দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত, অন্যদিকে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেপাল। চলতি বছরের সূচকে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশেরই স্কোর কমেছে। তবে বৈশ্বিক হিসাবে সূচকে ১০০-তে ৫৬.৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম।

এবারের সূচকে সরকারের অখণ্ডতা, করের বোঝা, ব্যবসার স্বাধীনতা ও শ্রম স্বাধীনতায় আগের চেয়ে বাংলাদেশের স্কোর বেড়েছে। মূলত করের বোঝা স্কোরের উল্লেখযোগ্য উন্নতির সুবাদে সূচকে বড় স্ফীতি ঘটেছে বাংলাদেশের। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করের বোঝা পরিমাপের ক্ষেত্রে সরাসরি করের বোঝা, ব্যক্তিগত ও করপোরেট পরিসরে করের হার এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় শতাংশ হিসেবে মোট আদায়কৃত কর রাজস্ব আয়- এসবগুলো বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়। বিগত দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে ধীরগতি কিন্তু স্থির প্রকৃতিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংকটি।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় কয়েক বছরের ব্যবধানে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষে রয়েছে ভুটান। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে কেবল ভুটান। দেশটির স্কোর ও অবস্থান হলো যথাক্রমে ৫৮.৩ এবং ১০৯তম। বাংলাদেশের ওপরে অবস্থান হলেও ভুটানের এ বছর অগ্রগতি কমেছে (-৩.৮) এবং বাংলাদশের বেড়েছে (+.১)।

ছবি: ইন্টারনেট

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও বাংলাদেশের মতো একই সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে রয়েছে- আইনের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতায় দুর্বল পারফরম্যান্স। দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও আছে যার প্রতিফলন দেখা গেছে সূচকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের আকার ও উন্মুক্ত বাজার ক্যাটাগরিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ, আইনের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতায় সমস্যা রয়ে গেছে। বাজার কমবেশি উন্মুক্ত হলেও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা খুবই দুর্বল; অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মবহির্ভূত ও অসঙ্গত। অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের প্রসারের কারণে অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। মুক্ত বাজার বিভাগের বাণিজ্য স্বাধীনতা শাখায় বাংলাদেশ ৬৩.৩, বিনিয়োগ স্বাধীনতা শাখায় ৪৫ এবং আর্থিক স্বাধীনতা শাখায় ৩০ পয়েন্ট পেয়েছে। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন লিখেছে, সরকার বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিবর্তনের গতি খুব ধীর। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এখনও আর্থিক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়ে গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশিদের ৫৪ শতাংশেরই ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাণিজ্য স্বাধীনতা বিভাগে বাংলাদেশ আগের চেয়ে এগিয়েছে; বিনিয়োগ স্বাধীনতায় পিছিয়েছে।